সুনামগঞ্জ , শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ , ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অপহরণের ১৪ দিন পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ব্যবসায়ীকে উদ্ধার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতার বিরুদ্ধে টিআরের বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে অক্টোবরে আসামি থেকে রাজসাক্ষী : সুবিধা-অসুবিধা জুয়া ও মাদকে সয়লাব শ্রীপুর বাজার জগন্নাথপুরে এমপি প্রার্থী এমএ কাহারের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ আমরা ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশ গড়তে চাই : আরিফুল হক চৌধুরী নিত্য যানজটে ভোগান্তি শহরবাসীর জেলায় পাসের হার ৬৮.৪৬%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১৭ জন বিএনপিতে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না : কামরুজ্জামান কামরুল শিক্ষক সংকটের মধ্যে আরো ৫ জন বদলি! ভোটের প্রতীক ‘শাপলা’ নয়, নীতিগত সিদ্ধান্ত ইসির ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ হাওরে মাছের আকাল, চাষের পাঙ্গাসই এখন ভরসা তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুই শিক্ষক! দিরাই আ.লীগের সম্পাদক প্রদীপ রায় কারাগারে ৬ দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি মৎস্য কার্যালয়ে পাওয়া গেল অফিস সহায়কের মরদেহ

পথে যেতে যেতে: পথচারী

  • আপলোড সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০৮:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০৮:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন
পথে যেতে যেতে: পথচারী
পৃথিবীতে যুগে যুগে কিছু মানুষের জন্ম হয়, যারা অনেক কিছু দিয়ে যান - যা মানুষ স্মরণ করে রাখে। এদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষণজন্মা হয়ে থাকেন। তাদেরই একজন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। বলা যায় বাংলা সাহিত্যে ক্ষণজন্মা একজন কবি হচ্ছেন সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। মাত্র একুশ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। তাঁর সাহিত্য সাধনা ছিল মাত্র ৬/৭ বছরের। এরই মধ্যে তিনি এমন সব রচনা রেখে গেছেন তা পৃথিবীতে অমর হয়ে আছে। মূলত বাংলাদেশে তাঁর পৈতৃক নিবাস হলেও ভারতের কলকাতায় মাতামহের বাড়িতে (৪৩ মহিম হালদার স্ট্রিট, কালিঘাট) তার জন্ম। বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাধীন আমতলী ইউনিয়নের ঊনশিয়া গ্রামে তার পৈতৃক নিবাস। কবি সুকান্তের জন্ম ৩০ শে শ্রাবণ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৯২৬ খ্রি.-এর ১৫ আগস্ট। পিতা নিবারণ ভট্টাচার্য্য এবং মাতা সুনীতি দেবী। পিতা ছিলেন পুস্তক ব্যবসায়ী। সেই সুবাদে প্রকাশনা ও বাসায় থাকতো অনেক বই। কিশোর সুকান্ত ঐ সকল পুস্তকাদি পড়তেন। প্রতিটি লেখাই তার মনোযোগ আকর্ষণ করতো। মন দিয়ে কিশোর সুকান্ত পড়াশোনায় সময় দিতেন। মাতা সুনীতি দেবী ছিলেন কেবলই গৃহিণী। গৃহিণী হলেও তিনি ফাঁক পেলে বই পড়তেন এবং কিশোর সুকান্তকে পড়ায় আগ্রহ যোগাতেন। কবির পিতার পুস্তক ব্যবসা তেমন জমজমাট না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে পরিবারটি ছিল দরিদ্র্য। এই দারিদ্র্যতার ভেতর দিয়ে পিতা সন্তানদের পড়াশোনায় সময় দিতেন। কেননা, তিনি জানতেন পৃথিবীতে পড়াশোনা ব্যতীত কোন মূল্যায়ন নেই। বড় বড় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের জীবনী পাঠ করলে দেখা যায়, সে সকল ব্যক্তিরা ব্যাপক পড়াশোনা করতেন। তারা পরিশ্রমীও ছিলেন। অনেকের মতো অভাব-অনটনের ভেতর দিয়েই কবি বড় হতে থাকেন। নিবারণ ভট্টাচার্য্য ও সুনীতি দেবী দম্পতির ৭ সন্তান। তাদের মধ্যে কবি সুকান্ত ছিলেন দ্বিতীয়। অন্যান্যরা হলেন সুশীল ভট্টাচার্য্য, প্রশান্ত ভট্টাচার্য্য, বিভাষ ভট্টাচার্য্য, অশোক ভট্টাচার্য্য ও অমিয় ভট্টাচার্য্য। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য ছোটবেলায়ই পড়াশোনায় মনোযোগী হলেও প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার সুযোগ তেমন পাননি। তবে এর বাইরে তিনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন। তার জীবনে তাই তার জেঠতো বোন রাণী দি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। এই রাণী ভট্টাচার্য্যও ছিলেন সাহিত্যপ্রিয় মানুষ। নিয়মিত তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন। কিশোর কবিকে তিনি কাছে বসে থেকে নানা প্রকার বই পড়ে শোনাতেন। কবির জীবনে এই সুযোগ ছিল বেশ সহযোগী। তাই আমরা দেখতে পাই কিশোর বয়সেই কবি সম্পাদনা করেছেন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘দৈনিক স্বাধীনতা’র কিশোর বিভাগ। এ সময় প্রচুর পড়াশোনার সুযোগ তার হয়। পাশাপাশি অনেক নামিদামি লেখকদের সাথে পরিচয় ঘটে। লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মে তার। রাজনৈতিক চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন কবি। সমাজে নানা ঘাত-প্রতিঘাত কবিকে ব্যথিত করতো। সমাজের অনিয়মগুলো তাকে প্রতিবাদী করে তুলতো। তাই আমরা দেখতে পাই মার্কসবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিপ্লবী ধারার কবিতা লিখতে শুরু করেন। কিশোর সুকান্তের কথাবার্তা ও কাঁচা হাতের লেখনী তখন অন্যান্য পাঠকদের পাশাপাশি বোন রাণী দি’কেও আকর্ষণ করতো। তাই অবসরে ছোটভাই সুকান্তকে বিখ্যাত সব লেখকদের গল্প-কবিতা পড়িয়ে শুনিয়ে আনন্দ দিতেন। প্রচলিত আছে যে, সে সময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শ্রী মনীন্দ্রলাল বসু’র বিখ্যাত ছোটগল্প ‘সুকান্ত’ পাঠ করে রাণী দি তার আদরের ভাইটির নাম রেখেছিলেন ‘সুকান্ত’। কিশোর কবি সুকান্তের জীবনে রাণী দি’র ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্য খুব অল্প সময় লেখালেখির সুযোগ পান। কিন্তু সময় অল্প হলেও তার লেখালেখির ভাব ও বক্তব্য ছিল চমকপ্রদ। তার কবিতা ‘ছাড়পত্র’ তাকে বাংলা সাহিত্য জগতে অমর করে রেখেছে। তার আর কিছু বিখ্যাত কবিতা ‘উদ্যোগ’, ‘দুর্মর’, ‘রানার’, ‘প্রিয়তমাসু’ ইত্যাদি। দুঃখজনকভাবে হলেও সত্যি যে, প্রতিভাধর এই কবি অল্প সময়ে মাত্র একুশ বছর বয়সে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে ভারতের রায় টিবি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বলা হতো ‘ইয়ং নজরুল’ বা ‘কিশোর বিদ্রোহী কবি’।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স